অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের নারী শিক্ষা নীতি দেশটিকে ঘোলাটে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ রেখেছে তালেবান প্রশাসন। তাদের এই সিদ্ধান্তে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ওআইসি’র মহাসচিব হোসেন ইব্রাহিম তাহা বলেছেন, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। তালেবানের এ ধরণের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
অবশ্য তালেবান বলছে, মেয়েদের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত কাঠামো গড়ে তোলা এখনও সম্ভব হয়নি। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পর তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা হবে। এর আগে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
মিশরের আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ও বিশ্ব উলামা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আহমাদ আল তাইয়্যেবও নারী শিক্ষার বিষয়ে গৃহীত নীতি পরিবর্তনের জন্য তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তালেবান সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের ভেতরেও সংগঠনটির জনপ্রিয়তা হ্রাস করবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। আফগানিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরহাদ বাবর বলেছেন, আফগান মেয়েদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা বন্ধ রাখার কারণে জনগণের সঙ্গে তালেবানের দূরত্ব আগের চেয়ে আরও বাড়বে। মেয়েদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আফগান ছেলেরাও ক্লাস বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এরিমধ্যে আফগানিস্তানে তাদের সেবা কার্যক্রম সীমিত অথবা বন্ধ করে দিয়েছে।
২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই স্বীকৃতি সংকটে ভুগছে তালেবান সরকার। কোনো রাষ্ট্র ও সংস্থাই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে না। তারা সমাজের সব শ্রেণী ও গোষ্ঠীর মানুষের স্বার্থ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে এমন একটি সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তালেবান এমন কোনো সরকার গঠনে এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। এ কারণে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এখনও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। নানা দেশে তাদের অর্থ আটকে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও আসছে না। এ অবস্থায় মেয়েদের শিক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে দেশটি আরও বেশি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।
দুই দশকের মার্কিন আগ্রাসনে বিপর্যস্ত দরিদ্র আফগান জনগণ দখলদার সেনাদের প্রস্থানে তিন বেলা পেট পুরে খাওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে। তালেবানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্রমেই আরও ক্ষীণ হয়ে আসছে।
Leave a Reply